নাটকের মতো
গঙ্গার ধারে বসে সিগারেট টানছিলাম। চাতালে বসে । গঙ্গার মৃদুমন্দ বাতাস , বিকেলের পড়ন্ত রোদের গঙ্গার জলে ঝলকানি , এক কথায় দারুন প্রাণোচ্ছল।
যাইহোক সেখানে সিঁড়িতে বসে একটি ছেলে। হার্ডলি উচ্চমাধ্যমিক হবে । ঘাটে বসে কাঁদছিলো। ওর এক বন্ধু আর বন্ধুর প্রেমিকা এসে খুব করে বোঝাচ্ছিল। ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ঘটেছে। এই দুটো কথার টুকরো কানে এল।
কেউ মনে হয় ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে ছেলেটার ইমশন নিয়ে... আর নয় তো প্রথম প্রেমের প্রত্যাখান সইতে না পেরে...হবে কিছু একটা। "কারোর মজা লোঠার জন্যে কারও মন ভেঙে দেওয়া উচিৎ?" এরম কথার টুকরো আবারো হাওয়ায় ভেসে এল। এসব চোখের সামনে ঘটতে দেখে মনের মধ্যেও কিছু ভাবনা ইতিউতি দিচ্ছিল।
এই মুহূর্তে ছেলেটা যদি গঙ্গায় ঝাঁপ দেয় আর সেখানে যদি আমি একা থাকতাম , তবে আমার ভূমিকা কী হবে? আমি কি ওকে বাঁচাবো ? না, মনে হয় নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখব। দেখব আর আমিও মজা লুটব!
ওই ছেলেটির নাটক শেষ হবার পরে দুটো অন্য ছেলে এল। সিঁড়ির ওপর বসল। আরও তিনটে মেয়ে ঝড়ের গতিতে খিলখিলিয়ে যোগ দিল। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে চোখেমুখে যেন রাজ্য জয়ের ভাব। নাগাড়ে খানিক্ষণ তাদের সেল্ফি জুলফি লাভফি আরো কত কী চলল। বিদায় নিল অসহ্য কিছু মুহূর্তের পর।
তারপর এক মাঝবয়েসি লোক এল একটা ঝোলা হাতে। জামাকাপড় ছেড়ে গঙ্গায় স্নান করতে শুরু করল। ব্যাগটাতে কিছু খাবার ছিল হয়ত। একটা ছাগল কোথ্থেকে এসে খেতে শুরু করল। অনেক্ষণ এই দৃশ্য উপভোগের পর যখন উঠে তাড়াতে গেলাম লোকটা চেঁচিয়ে বলে উঠল "উয়ারে খাইতে দিন, উটা উয়ার খাবার গো বাবু। রোজ আইনা দিই।" কেমন যেন বোকা হয়ে গিয়ে বসে পড়লাম চাতালে।
এরপর কিছু বিড়িখোর, জুয়াখোর এল। হয়ত তাদের মধ্যে কিছু মদখোরও থাকবে।
সবশেষে এল মৃতের পরিবার। শোকস্তব্ধ। রঙচঙে দিনটা কেমন যেন সাদা আর ফিকে হয়ে গেল।
আমি অনুভব করলাম একটা গোটা জীবনছবি। জীবনের পুরো একটা চলচ্চিত্র যেন চোখের সামনে দেখা হয়ে গেল গঙ্গার ঘাটে ওইটুকু মুহূর্তে। জীবন থেকে মৃত্যু। কতকগুলো দৃশ্য পরপর সাজানো। নাটকের মতো। হ্যাঁ, নাটকই তো!
No comments:
Post a Comment