1) পিঁয়াজের মতে বৌদ্ধিক বিকাশের স্তর গুলি কী? বৌদ্ধিক বিকাশের বিভিন্ন স্তরের বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখ?/ পিঁয়াজের প্রজ্ঞামূলক বিকাশের সূত্রটি আলোচনা করো।
উঃ- পিঁয়াজের
মতে
বৌদ্ধিক
বিকাশের
স্তর
গুলি
হল – ১. সংবেদন-চালকমূলক
স্তর
(Sensori
Motor Stage), ২. প্রাক্-সক্রিয়তার
স্তর
(Pre-operational
Stage), ৩. মূর্ত-সক্রিয়তামূলক
স্তর
(Concrete
Operational Stage) এবং ৪. যৌক্তিক
সক্রিয়তার
স্তর
(Formal
Operational Stage)
১.
সংবেদন-চালকমূলক স্তর (Sensori Motor
Stage)
সময়সীমা: জন্মকাল
থেকে
2 বছর পর্যন্ত
বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
- শিশু নিজের
জগতে
বাস
করে।
- নিজেকে নিয়েই
ব্যস্ত
থাকে।
- অন্যের অস্তিত্ব
সম্পর্কে
সচেতন
থাকে
না।
- শিশুদের মধ্যে
সমাজসচেতনতা
একেবারেই
থাকে
না।
- বস্তুর স্থায়িত্ব
সম্পর্কে
কোনো
বোধ
থাকে
না।
- কোনো বস্তু
বা
ব্যক্তিকে
দূরে
সরিয়ে
নিলে
তারা
মনে
করে
আর
নেই।
- বস্তুর আকৃতি, আকার, বর্ণ
ইত্যাদির
পার্থক্য
নির্ণয়
করতে
পারে।
- কার্যকারণ বুঝতে
শেখে।
- সময় ও
দূরত্বের
জ্ঞান
হয়
না।
1.
প্রতিবর্ত
ক্রিয়া
(Reflexes)
(0-1 মাস):
- শিশুর প্রথম
মাসের
সময়কাল।
- প্রাথমিক প্রতিবর্ত
ক্রিয়া
যেমন
চোষা, ধরা, এবং
চোখের
পলক
ফেলা।
- শিশু তার
নিজের
শরীরের
সঙ্গে
সম্পর্কিত
পুনরাবৃত্ত
ক্রিয়া
শুরু
করে।
- যেমন আঙুল
চোষা
বা
হাত-পা
নাড়া।
- শিশুর ক্রিয়াগুলো
নিজের
শরীর
থেকে
বাইরের
বস্তুর
দিকে
প্রসারিত
হয়।
- যেমন খেলনার
সঙ্গে
খেলা
বা
শব্দ
করে
আনন্দ
পাওয়া।
4. গঠনমূলক সমন্বয় (Coordination of Secondary Circular Reactions) (8-12 মাস):
- শিশু পূর্ববর্তী
অর্জিত
ক্ষমতা
এবং
অভিজ্ঞতা
সমন্বয়
করতে
শেখে।
- যেমন লক্ষ্যবস্তু
পাওয়া
বা
সরানো।
- শিশুর ক্রিয়াগুলো
আরও
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
মূলক
হয়ে
ওঠে।
- যেমন বস্তু
নিয়ে
বিভিন্ন
ভাবে
খেলা
করা।
- শিশু মানসিকভাবে
বস্তুর
চিত্র
ধারণ
করতে
সক্ষম
হয়।
- যেমন পূর্ব
অভিজ্ঞতা
ব্যবহার
করে
নতুন
সমস্যার
সমাধান
করা।
শিক্ষাগত তাৎপর্য:
- শিশুদের নিকট
বিভিন্ন
আকার, আকৃতি
ও
খেলনার
বস্তু
প্রদান।
- বিভিন্ন ধরণের
খেলনা
সরবরাহ
করতে
হবে।
- বস্তুর আকার, আকৃতি, বর্ণ
সম্পর্কে
জ্ঞান
অর্জন।
- দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের
ব্যবহার
শেখা।
- শক্ত, নরম, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত, স্থবির, গতিশীল
বস্তু
সম্পর্কে
জ্ঞান
অর্জন।
- শিশুর প্রজ্ঞামূলক
বিকাশের
জন্য
পারিপার্শ্বিক
বস্তুর
সঙ্গে
প্রতিক্রিয়া
করানো।
- বস্তুকে স্পর্শ
করা, মুখে
দেওয়া, সরিয়ে
দেওয়া, কাছে
টেনে
নেওয়া, ধরার, ছোড়ার, উপর
থেকে
ফেলার
মত
প্রতিক্রিয়া
করা।
- সংবেদন-চালকমূলক
ক্রিয়ার
দ্বারা
শেখা।
২.
প্রাক্-সক্রিয়তার স্তর (Pre-operational
Stage)
সময়সীমা: 2 বছর থেকে
7 বছর
বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
1. বাস্তববাদ (Realism):
- শিশু ধীরে
ধীরে
প্রকৃত
জগতের
অস্তিত্ব
স্বীকার
করে।
- বহির্জগৎ ও
অন্তর্জগৎ
সম্পর্কে
জ্ঞান
হয়।
2. সর্বপ্রাণবাদ
(Animism):
- সব বস্তুকেই
সজীব
বলে
মনে
করে।
- চারটি স্তর:
- প্রায় সব
বস্তুই
সজীব।
- কেবল চলনক্ষম
বস্তু
সজীব।
- স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলনক্ষম
বস্তু
সজীব।
- সচেতনতা কেবল
জীবজগতে
সীমাবদ্ধ।
3. কৃত্রিমতা (Artificiality):
- সবকিছুই মানুষের
সৃষ্টি
মনে
করে।
- উদাহরণ: 'চাঁদ
মেঘ
থেকে
আসে'।
4. অবযুক্তিপূর্ণ
বিচার
(Transductive
Reasoning):
- অযৌক্তিকভাবে এক
থেকে
অন্যটির
বিচার।
- উদাহরণ: 'সূর্য
থেমে
আছে
কারণ
এটি
হলুদ'।
সীমাবদ্ধতা (Limitations):
- বস্তুর বিভিন্ন
অংশের
মধ্যে
সীমাবদ্ধতা
বিচার
করে
না।
- বস্তুকে নিজের
মতো
করে
দেখে, অন্যের
মতামত
বিচার
করে
না।
- 2 + 2 = 4 বুঝতে
পারে, কিন্তু
4
- 2 = 2 বুঝতে পারে
না।
- পূর্বে দেখা
কাজ
অনুকরণ
করতে
পারে।
- ঘুমিয়ে পড়ার
ভান
করে
বা
অন্য
কিছু
ভাবতে
ভালোবাসে।
- কল্পনাগুলিকে অঙ্কনের
মাধ্যমে
প্রকাশ
করে।
- মানসিক প্রতিকল্প
গঠন
করতে
পারে, কিন্তু
পরিবর্তন
বা
অনুমান
করতে
পারে
না।
- চিন্তার বাহন
হিসেবে
ভাষা
ব্যবহার
করে।
- ছবি সম্পর্কে
শিক্ষার্থীদের
প্রশ্ন
করা।
- বস্তু সাজিয়ে
শিশুদের
জিজ্ঞাসা
করা, কোনটি
বৃহৎ।
- ছবি দেখে
গল্প
বলার
অনুপ্রেরণা
দেওয়া।
2.
বস্তু
বিন্যাস:
- গোলাকার বস্তু
বিভিন্নভাবে
সাজিয়ে
তার
উপর
প্রশ্ন
করা।
এগুলো শিক্ষার্থীদের
প্রজ্ঞা
বিকাশে
সহায়তা
করে।
৩.
মূর্ত-সক্রিয়তামূলক স্তর (Concrete
Operational Stage)
সময়সীমা: 7 থেকে 11 বছর
বৈশিষ্ট্য:
1.
সংরক্ষণ
(Conservation):
- কোনো বস্তুর
বাহ্যিক
কিছু
পরিবর্তন
হলেও
মূল
বস্তুটির
কোনো
পরিবর্তন
হয়
না।
- পিঁয়াজে-র
পরীক্ষা:
দুটি
পাত্রের
জল
তৃতীয়
পাত্রে
ঢেলে
সমান
পরিমাণে
থাকার
ধারণা।
2.
সমতা
বা
অভেদের
যুক্তি:
- শিশুরা বুঝতে
পারে
যে, অতিরিক্ত
জল
ঢালা
হয়নি
বা
ফেলে
দেওয়া
হয়নি।
3.
বিপরীতমুখিতার
যুক্তি:
- শিশুরা বোঝে, জল
পূর্বের
পাত্রে
ফিরিয়ে
নিলে
একই
পরিমাণ
থাকবে।
4.
পূরণের
যুক্তি:
- শিশুরা বুঝতে
পারে, জারের
উচ্চতা
বেশি
কারণ
এটি
সরু।
5.
ক্রমপর্যায়
(Seriation):
- বস্তুর আকার
বৃদ্ধি
বা
হ্রাসের
প্রেক্ষিতে
বিন্যাস
করা।
6.
শ্রেণিকরণ
(Classification):
- অধিক সংখ্যক
বস্তুর
মধ্যে
সাদৃশ্য
বা
সাধারণ
গুণাবলির
প্রেক্ষিতে
একত্রীকরণ।
7.
সংখ্যার
ধারণা
(Number
Concept):
- সংখ্যা সম্পর্কে
সঠিক
ধারণা।
শিক্ষাগত তাৎপর্য:
-
শিক্ষার্থীদের
মূর্ত
এবং
উপযুক্ত
কাজের
সঙ্গে
যুক্ত
করা।
-
সাধারণ
উপকরণ
ব্যবহার
করে
শ্রেণিকরণ
এবং
ক্রমকরণের
শিক্ষা।
৪. যৌক্তিক
সক্রিয়তার
স্তর
(Formal
Operational Stage)
সময়সীমা: 11 থেকে 18 বছর
বৈশিষ্ট্য:
1. সম্ভাবনা থেকে
বাস্তব
পৃথকীকরণ:
- সমস্যা সমাধানে
বিভিন্ন
দিক
বিশ্লেষণ
এবং
উত্তম
পথের
সিদ্ধান্ত
নেওয়া।
2. তথ্যসংগ্রহ এবং
সমন্বয়:
- প্রয়োজনমতো তথ্যসংগ্রহ
এবং
সমস্যার
সমাধান।
3. Hypothetico-deductive thinking:
- সংগৃহীত তথ্যগুলি
পরীক্ষা
করে
দেখা।
শিক্ষাগত
তাৎপর্য:
-
শিক্ষার্থীদের
তথ্য
ব্যাখ্যা
এবং
কারণ
দর্শানো।
-
শিক্ষার্থীদের
মূর্ত
উদাহরণের
সাহায্যে
সচেতন
করে
তোলা।
পিঁয়াজে-র
তত্ত্বের
শিক্ষাগত
তাৎপর্য
1. প্রজ্ঞার বিকাশ:
- আত্তীকরণ, সহযোজন
এবং
সাংগঠনিকীকরণের
মাধ্যমে
প্রজ্ঞার
বিকাশ।
2. শিক্ষণ পদ্ধতির
গুরুত্ব:
- প্রতিটি স্তরের
প্রজ্ঞামূলক
বিকাশের
চাহিদা
অনুযায়ী
শিক্ষণ
পদ্ধতি
ও
বিষয়
নির্ধারণ।
3. ভাষা এবং
ধারণা
গঠন:
- ভাষার উপর, ধারণা
গঠনের
উপর
গুরুত্ব।
4. মূর্ত অভিজ্ঞতা
এবং
বাচনিক
রূপান্তর:
- শৈশবে ভাষার
উপর, বাল্যকালে
মূর্ত
অভিজ্ঞতা
এবং
বিদ্যালয়ের
অন্তিম
লগ্নে
যুক্তিভিত্তিক
চিন্তার
উপর
গুরুত্ব।
5. শিক্ষণ কার্যক্রম:
- প্রতিটি স্তরের
কার্যাবলি
বিবেচনা
করে
শিক্ষণ
পদ্ধতি
নির্ধারণ।
2) গেস্টাল্ট
তত্ত্ব কী? এর
শিক্ষাগত তাৎপর্য
লেখো।
উঃ- গেস্টাল্ট
তত্ত্বের
সংজ্ঞা:
গেস্টাল্ট
তত্ত্ব
হলো
একটি
মনস্তাত্ত্বিক
তত্ত্ব
যা
জার্মান
মনস্তাত্ত্বিকদের
দ্বারা
১৯২০-এর
দশকে
বিকশিত
হয়েছিল।
এই
তত্ত্বটি
মানুষের
মানসিকতা
ও
আচরণের
সামগ্রিকতা
ব্যাখ্যা
করে
এবং
ধারণা
দেয়
যে
সমগ্র
সব
সময়
তার
অংশের
যোগফলের
চেয়ে
বেশি
গুরুত্বপূর্ণ।
মূল
ধারণা:
গেস্টাল্ট
তত্ত্বের
মূল
ধারণা
হলো
"The
whole is different from the sum of its parts" অর্থাৎ, পূর্ণাঙ্গ
কোনো
কিছুর
মানে
তার
অংশগুলির
যোগফলের
চেয়ে
আলাদা
এবং
বেশি।
ধারণাগুলি:
গেস্টাল্ট
তত্ত্বে
পারসেপশন
বা
ধরণাবিশ্লেষণের
কয়েকটি
মূল
ধারণা
রয়েছে
যেমন
প্রগন্যাজ
(figure-ground
organization), সাদৃশ্য (similarity),
নৈকট্য
(proximity),
ধারাবাহিকতা
(continuity),
এবং
বন্ধকরণ
(closure)।
এর
শিক্ষাগত
তাৎপর্য:
1. শিক্ষার
গঠনমূলক
পদ্ধতি:
গেস্টাল্ট
তত্ত্ব
শিক্ষায়
গঠনমূলক
পদ্ধতি
প্রয়োগ
করে, যেখানে
শিক্ষার্থীদের
সম্পূর্ণ
ধারণা
বুঝতে
উৎসাহিত
করা
হয়।
2. সমস্যা
সমাধান:
শিক্ষার্থীদের
সমস্যা
সমাধানের
ক্ষেত্রে
পূর্ণাঙ্গ
দৃষ্টিভঙ্গি
গ্রহণ
করতে
সহায়তা
করে।
3. বিষয়বস্তুর
আয়ত্ত:
বিষয়বস্তুর
সামগ্রিক
ধারণা
পেতে
সাহায্য
করে, যা
শিক্ষার্থীদের
একক
তথ্য
বা
অংশের
চেয়ে
সম্পূর্ণ
ধারণা
আয়ত্ত
করতে
সহায়ক।
4. সৃষ্টিশীলতা
ও
উদ্ভাবন:
শিক্ষার্থীদের
সৃষ্টিশীল
ও
উদ্ভাবনী
চিন্তা
করতে
উৎসাহিত
করে।
5. মানসিক
উন্নয়ন:
শিক্ষার্থীদের
মানসিক
ও
বৌদ্ধিক
উন্নয়নে
সহায়তা
করে, যা
তাদের
শিক্ষায়
এবং
জীবনে
সফল
হতে
সহায়ক।
No comments:
Post a Comment